ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল—আধুনিক নার্সিংয়ের প্রবর্তক

১৮২০ সালে ইতালিতে এক ইংরেজ পরিবারে ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের জন্ম হয়। তার বাবামা খুবই ধনী ছিলেন আর তাই তিনি অনেক আদরযত্নে ও বিত্তবৈভবের মধ্যে মানুষ হন। যুবতী ফ্লোরেন্স অনেক বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন আর স্বাস্থ্য নিয়ে পড়াশোনা এবং দুঃস্থদের সেবা করতে শুরু করেন। বাবামার শত নিষেধ সত্ত্বেও, ফ্লোরেন্স জার্মানির কাইজারওয়ার্থে একটা স্কুলে নার্সদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ নেন। পরে তিনি প্যারিসে পড়াশোনা করেন এবং ৩৩ বছর বয়সে লন্ডনে মহিলাদের একটা হাসপাতালের পরিচালিকা হন।

কিন্তু ফ্লোরেন্স যখন স্বেচ্ছায় ক্রিমিয়ার আহত সৈনিকদের সেবা করার জন্য যান, তখনই তিনি জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষার মুখোমুখি হন। সেখানে তাকে এবং তার দলের ৩৮ জন নার্সকে মিলে ইঁদুরে ভরা হাসপাতাল পরিষ্কার করতে হয়। প্রথমে সেখানে কাজ করাকে অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল কারণ ওখানে কোন সাবান ছিল না, হাত-মুখ ধোয়ামোছার জন্য কোন বেসিন বা তোয়ালে ছিল না আর রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত খাট, তোশক ও ব্যান্ডেজও ছিল না। কিন্তু ফ্লোরেন্স ও তার দলের নার্সরা সেই কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্রাণপণ করেছিলেন আর যুদ্ধ শেষে তিনি সারা বিশ্বের নার্সিং পদ্ধতি এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার সংস্কার করেছিলেন।

১৮৬০ সালে তিনি লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালে নার্সদের জন্য নাইটিংগেল প্রশিক্ষণ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। লন্ডনে এটাই ছিল প্রথম নার্সিং স্কুল যেটাতে কোন ধর্মীয় প্রভাব ছিল না। ১৯১০ সালে মারা যাওয়ার আগে তিনি দীর্ঘ সময় অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় ছিলেন। তারপরও তিনি স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নের জন্য অনেক বই ও প্যাম্‌ফ্যাল্ট লিখে গিয়েছিলেন।

কেউ কেউ ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের পরহিতব্রতী ভাবমূর্তির বিরুদ্ধে আপত্তি জানান। তারা বলেন যে, নার্সিং পদ্ধতি প্রবর্তনে অবদান রাখার জন্য অন্যরাও কিছুটা কৃতিত্বের ভাগীদার। এছাড়াও তার চরিত্র নিয়েও অনেক বিতর্ক রয়েছে। নার্সিংয়ের ইতিহাস (ইংরেজি) নামে একটা বই বলে যে, কিছু জন দাবি করেন তিনি “বদমেজাজি, স্বেচ্ছাচারী, একগুঁয়ে, বদরাগী ও উদ্ধত” ছিলেন কিন্তু অন্যরা আবার তার “মেধা ও গুণ, অসাধারণ সহ্য শক্তি আর তার পরস্পরবিরোধী ব্যক্তিত্বের” কারণে তার ভক্ত ছিলেন।

তার সত্যিকারের চরিত্র যাই হোক না কেন, একটা বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে তার নার্সিং কৌশল এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা অনেক দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। তিনিই নার্সিংকে পেশা হিসেবে প্রবর্তন করেছেন বলে মনে করা হয় আর আজকে আমরা তাই-ই জানি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *