নার্সিং পড়ার যোগ্যতা | মাসে বেতন কত | 

নার্সিং একটি মহৎ পেশার নাম। উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর অধিকাংশ মেয়েদেরই পছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকে এই পেশাটি। কিন্তু নার্সিং পড়ার যোগ্যতা থাকা সত্যেও শুধুমাত্র সঠিক ধারণার অভাবে মহৎ এ পেশায় আসতে পারছে না। অথচ আমাদের দেশে প্রতিবছরই যোগ্য ও পেশাদার নার্সের চাহিদা বাড়ছে।

একজন নার্স চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে রোগীর সেবা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পরিচর্যার কাজ করে থাকেন। আপনি যদি আগে থেকেই একটি সেবামূলক পেশায় আসতে চান, তবে নার্সিং হতে পারে আপনার জন্য আকর্ষণীয় একটি পেশা। তবে এ পেশায় আসতে চাইলে শুরুতেই আপনার নার্সিং পড়ার যোগ্যতা থাকতে হবে।

আমাদের দেশে অভিভাবকদের বেশিরভাগই সন্তানকে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বানাতে চায়। কিন্তু দারুণ সম্ভাবনাময় নার্সিং পেশায় সন্তানকে পড়ানোর প্রবণতা তেমন একটা নেই। এর ফলে শিক্ষাজীবন শেষ করে মানবসেবার পাশাপাশি ভালো ক্যারিয়ারের যে দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে, তা অনেকেই গ্রহণ করতে পারছেন না।

নার্সিং বিষয়ে অনেকের স্পষ্ট ধারণাও নেই। তাই নার্সিং পড়ার যোগ্যতা, কোথায় পড়বেন নার্সিং, কাজের ধরন এবং নার্সের মাসিক আয়সহ কিভাবে আপনি মহৎ এ পেশায় ক্যারিয়ার গঠন করতে পারেন, সেই গুরত্বপূর্ণ তথ্যগুলোই থাকছে আজকের এই লেখায়। তাহলে চলুন, শুরু করি।

নার্সিং পড়ার যোগ্যতা

নার্সিং কোর্সে আবেদন করতে হলে আপনাকে দেশের যেকোনো শিক্ষা বোর্ড থেকে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় ন্যূনতম GPA 2.25 এবং এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় ন্যূনতম GPA 2.50 পেয়ে পাস হতে হবে।

সাধারণত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নার্স নিয়োগ করে বাংলাদেশ সরকারের সেবা পরিদপ্তর। তাই নিয়োগ পাওয়ার জন্য আপনাকে বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল অনুমোদিত যেকোন সরকারি-বেসরকারি নার্সিং কলেজ বা নার্সিং ইন্সটিটিউট থেকে Diploma in Nursing বা BSc in Nursing কোর্স সম্পন্ন করতে হবে।উক্ত কোর্স সম্পন্ন করে যে কেউ নার্সিং পদের জন্য আবেদন করতে পারেন।

কোথায় পড়বেন নার্সিং?

বর্তমানে বাংলাদেশে ৭ টি সরকারি ও ২১ টি বেসরকারি নার্সিং কলেজ কলেজ রয়েছে। পাশাপাশি ৪৩ টি সরকারি ও ৭০ টি বেসরকারি নার্সিং ইনিস্টিটিউট রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে আপনি তিন বছর মেয়াদী Diploma in Nursing Science and Midwifery ও Diploma in Midwifery কোর্স করতে পারবেন। এছাড়াও এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে চার বছর মেয়াদী Bachelor of Science in Nursing পড়ানো হয়।

তবে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও নার্সিং বিষয়ক ডিপ্লোমা কোর্স করানো হয়। এছাড়া অর্থোপেডিকস, সাইকিয়াট্রিক, পেডিয়াট্রিক, সিসিইউ, আইসিইউ ও কার্ডিয়াক নার্সিংসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর এক বছর মেয়াদী কোর্স চালু রয়েছে।

নার্সিংয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে কোর্সের শেষে ছয় মাসের ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল আয়োজিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই আপনি একজন নার্সিংকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করতে পারবেন।

নার্সদের কাজের ধরন

নার্স মানে চিকিৎসক নয়। কিন্তু তারপরেও নার্সদের হাতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকে। একজন নার্স চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। যেমন রক্তচাপ মাপা এবং শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করা ইত্যাদি। আবার ডাক্তারের নির্দেশনা মোতাবেত রোগীকে সময়মত ও সঠিকভাবে ঔষধ খাওয়ানোও নার্সের কাজের মধ্যে পরে।

পাশাপাশি অপারেশনের আগে প্রয়োজনীয় সকল সরঞ্জামসহ Operation Theater প্রস্তুতের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজ নার্সদের করতে হয়। এরপরে রোগীকে অপারেশন টেবিলে নিয়ে যাওয়া এবং অপারেশনের সময় ডাক্তারকে সাহায্য করা নার্সের দায়িত্ব। সবশেষে রোগীর সার্বিক পরিচর্যার করা স্বাস্থ্যের অগ্রগতি বা অবনতি সম্পর্কে ডাক্তারকে নিয়মিত জানানো নার্সদের নিয়মিত কাজের অন্তর্ভুক্ত।

নার্সদের কর্মক্ষেত্র

সরকারী-বেসরকারী উভয় সেক্টরে নার্সদের কর্মক্ষেত্র প্রায় একই রকম হয়ে থাকে। তবে সরকারী নার্সদের কাজের ক্ষেত্র কিছুটা বিস্তৃত। সরকারী নার্সরা সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এবং আইনশৃঙ্খলা ও সামরিক বাহিনীর চিকিৎসা বিভাগে দায়িত্ব পেয়ে থাকেন।পাশাপাশি দেশের জরুরী প্রয়োজনে আকষ্মিক কোন দুর্যোগ মোকাবিলায়ও সরকারী নার্সদের দায়িত্ব দেয়া হয়।

অপরদিকে বেসরকারী নার্সরা সাধারণত বেসরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এবং ব্যক্তিগত ক্লিনিকে কাজ করে থাকেন। তবে নার্সদের কাজেরও বেশকিছু পদ রয়েছে। কাজের ক্ষেত্র ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী আপনি অ্যাসিস্ট্যান্ট নার্স, স্টাফ নার্স, ওটি সিস্টার বা নার্সিং সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাবেন।

আবার অনেকে নার্সিং কলেজে ইন্সট্রাক্টর বা ডেমোনস্ট্রেটর ইনচার্জ হিসেবেও নিয়োগ পেয়ে থাকেন। এছাড়া ভালো দক্ষতা থাকলে নার্সিং অধিদপ্তরে প্রজেক্ট অফিসার বা সহকারী পরিচালক পদেও কাজ করতে পারেন।

একজন নার্সের মাসিক আয়

নার্স হিসেবে ক্যারিয়ারের শুরুতে আপনি অ্যাসিস্ট্যান্ট নার্স বা ওটি সিস্টার হিসেবে সরকারি হাসপাতালে যোগ দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে সরকারি বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী সম্ভাব্য গড় বেতন ৮,০০০ টাকা – ১৬,৫৪০ টাকা মাসিক বেতন পাবেন। অপরদিকে বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে সাধারণত ১৪,০০০ টাকা থেকে বেতন নার্সদের বেতন শুরু হয়। তবে প্রতিষ্ঠানভেদে এর পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *